![]() |
| ব্লু ইকোনমি বাংলাদেশ |
ব্লু-ইকোনোমির সম্ভাবনাঃ সমুদ্র ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে বাংলাদেশের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। সাগর থেকে প্রাপ্ত বায়ু, তবঙ্গ বা ঢেউ, জোয়ার-ভাটা, জৈব-তাপীয় পরিবর্তন, লবণাক্ততার মাত্রা ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যাপক পরিমাণে নবায়নযোগ্য শক্তির জোগান পাওয়া সম্ভব। প্রতি বছর পৃথিবীতে সমুদ্রবর্তী বায়ু ব্যবহারের সক্ষমতা ৪০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ববাণিজ্যের ৮০ শতাংশ সম্পাদন হয় সমুদ্রপথে। বাংলাদেশকে যদি চীন বা তার মতো বৃহৎ অর্থনীতি থেকে উপকৃত হতে হয় তাহলে আমাদের চট্টগ্রাম, মংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর আধুনিকায়ন করে এগুলোকে গমনপথ হিসেবে ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।
•বিশ্বের ৩৫ কোটি মানুষের জীবিকা সরাসরি সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদনের ২০ শতাংশ জোগান আসে সমুদ্র থেকে। বিশ্বের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১৬ শতাংশ অবদান বঙ্গোপসাগরের।
সরকারের যথাযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ উৎপাদন আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করা সম্ভব। কেবল সমুদ্র অর্থনীতির সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেই যথেষ্ট আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধন করা যেতে পারে।
পরিবেশ দূষণ রোধের বিষয়কে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে ব্লু-ইকোনমি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অনবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার হ্রাস ও জাতীয় আয় বৃদ্ধিকে গুরুত্বরোপ করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৫৪ লাখ লোক সরাসরি এ অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত,যাদের বার্ষিক আয় প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ইউরো। সামুদ্রিক সম্পদ কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশের বিনিয়োগ ব্যুরো ও অনুসৃত কৌশল ও বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এখন বাংলাদেশ সরকারকেই তার ভূকৌশলগত সুবিধার ভিত্তিতে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
বঙ্গোপসাগরে রয়েছে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ। প্রতি বছর সেখান থেকে ৬৬ লাখ টন মৎস্য আহরণ করা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে আমরা সেখান থেকে খুব কমই আহরণ করছি। আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনে মৎস্য খাতের অবদান সাড়ে চার ভাগেরও কম। অথচ সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা তা অনেকাংশে বাড়িয়ে ফেলতে পারি। এজন্য আমাদের আধুনিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মাছ ধরার কৌশলেও পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।
মৎস্যসম্পদ ছাড়াও সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে বহু খনিজ সম্পদ। খনিজ সম্পদগুলোর মধ্যে লবণের কথা বললে আমাদের উপকূলে রয়েছে ৩০০ দরুণ শোধনাগার, যেগুলো সাত বছর ধরে বছরে ৩.৫ লাখ টন করে লবণ উৎপাদন করছে, যা বাজারের চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়।
লবণ শিল্পের দিকে একটু মনোযোগ দিলেই একে একটি রপ্তানিমুখী লাভজনক শিল্পে পরিণত করা সম্ভব।
এছাড়া বাংলাদেশ সমুদ্র থেকে যেসব সম্পদ পেতে পারে তা হলো বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যেমনঃ গ্যাস, তেল, কপার,ম্যাগনেশিয়াম, নিকেলসহ আরো অনেক মূল্যবান ধাতু যেমনঃ কোবাল্ট ইত্যাদি। তাছাড়া আমরা সামুদ্রিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে জাহাজ নির্মাণ ও ভাঙা এবং ওষুধ শিল্পেও আরো উপকৃত হতে পারি।
ব্লু-ইকোনমির প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয় চালু এবং সেখানে পর্যাপ্ত আসন সংখ্যার ব্যবস্থা করতে হবে। সামুদ্রিক সম্পদ সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক বিকাশ সাধনের জন্য আমাদের আগে সুনির্দিষ্ট খাতগুলো যেমন-
অ্যাকুয়াকালচার, পর্যটন, মেরিন বায়োটেকনোলজি, শক্তি (তেল-গ্যাস), সমুদ্রতলে খনি খনন ইত্যাদি চিহ্নিত করতে হবে। সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধের অবসানের পর আমরা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৮০ শতাংশের মতো বিশাল সমুদ্র এলাকা লাভ করি, যা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য খুবই গৌরবের ও আনন্দের; কিন্তু এ সুবিশাল সম্পদ যদি আমরা সঠিকভাবে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে না পারি তাহলে আমাদের এ অর্জনের কোনো মূল্য থাকবে না।
২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে বাংলাদেশ।
এরপর থাইল্যান্ড, ভারত এবং চীন। নতুন জলসীমার অধিকার পাওয়ায় ব্লু-ইকোনমি প্রসারে বাংলাদেশের জন্য এই বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সমুদ্রে মাছ আহরণের দিকে থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ২৫তম।
মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের সম্ভাবনাকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল।
ফলে গভীর সমুদ্র এলাকায় বিশাল অংশ বাংলাদেশের জলসীমায় অন্তর্ভুক্ত হয় এবং নতুন এ জলসীমার পরিমাণ বাংলাদেশের মোট স্থল অঞ্চলের প্রায় ৮১ শতাংশ। সমুদ্রসীমা জয়ের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু বিশাল এ এলাকার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।
সমুদ্র থেকে মৎস্যসম্পদ আহরণের লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছে অনেকদিন ধরে অর্থসহায়তা চেয়ে আসছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে এ বিষয়ে প্রস্তাবিত একটি প্রকল্পে ২০ কোটি মার্কিন ডলার ধরা হয়েছে।
