![]() |
| বাংলাদেশে দুর্নীতি |
> দেশের আমদানি-রপ্তানীর ক্ষেত্রেও প্রচুর দুর্নীতি হয়। আমদানীর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে টাকা পাচার করা হয়। আবার রপ্তানীর ক্ষেত্রে অল্প মূল্য দেখিয়েও শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়।
> চট্টগ্রাম বন্দর অব্যবস্থাপনার কারণে বছরে প্রায় ৬০০০ কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে।
>সরকারি বিভিন্ন কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে মুখ প্রদান করতে হয়ে।
রাস্তা তৈরি করতেও দুর্নীতি চলছে। রাস্তায় সঠিক পরিমাণে উপকরণ দেওয়া হয়না।বিল্ডিং তৈরি করতে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করার মত অদ্ভুত ঘটনা লক্ষ করা গেছে।
প্রতিবছর হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে উৎপাদন ও রপ্তানি ক্ষেত্রে কয়েক হাজার কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে।
বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা উন্নয়নে ব্যয় না হয়ে অধিকাংশ টাকাই আমলাদের পকেটে ঢুকে যাচ্ছে।
দুর্নীতির কারণে আরো যেসকল ক্ষতি হয়ঃ
জনগনের বিড়ম্বনা বৃদ্ধি করে; সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়; জনগন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
সরকারের প্রতি জনগনের শ্রদ্ধা ও আনুগত্য হ্রাস পায়; আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়; সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়; প্রশাসনিক দক্ষতা হ্রাস পায়। জনগন তার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়; নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় ইত্যাদি।
দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমাদের করনীয়ঃ
দুর্নীতি আজ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যমান। সমাজ থেকে দুর্নীতির ব্যাধিকে দূর করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
এই সমস্যার সমাধানের জন্য সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন। সরকারের গ্রহনীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি আমাদের যা যা
করতে হবে তা নিয়ে দেওয়া হলো:
> বিচার ব্যবস্থাকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
> স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ধর্মীয় বিশ্বাসকে উজ্জীবিত করতে হবে।
দুর্নীতি মুক্ত পরিবার গঠন করতে হবে।
>
>
কোথায় দুর্নীতি হলে তা সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
>দুর্নীতির ভয়াবহ কুফল ও পরিণতি সম্পর্কে সকলকে অবহিত করতে হবে। সৎ, যোগ্য, দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরির জন্য রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা থাকতে হবে।
> সরকারি-বেসরকারি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততার মানদ- রক্ষা করতে হবে। পক্ষপাত ও স্বজনপ্রীতি বর্জন করতে হবে।
> সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পদমর্যাদা ও দ্রব্যমূল্য অনুযায়ী সম্মানজনক জীবন-জীবিকার উপযোগী বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
> নিরপেক্ষ অডিট ব্যবস্থা, স্বচ্ছ মনিটরিং পদ্ধতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চতকরণ ও সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে
হবে।
>
দুর্নীতি দমন কমিশনকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব মুক্ত রাখতে হবে।
দুর্নীতি মুক্ত রাষ্ট্র ও প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
দুর্নীতির কারণ উদ্ঘাটন করে তা প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
> সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিতে হবে।
> প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
> দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করার জন্য ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।
উপসংহারঃ দুর্নীতি আমাদের জাতীয় উন্নয়নে সবসময়ই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। দুর্নীতি যেমন আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ডকে বিপর্যস্ত করেছে তেমনি বিশ্বের কাছে সেরা দুর্নীতিমস্ত দেশ হিসেবে আমাদের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করেছে। দুর্নীতিকে সমাজ থেকে চিরতরে দূর করার জন্য প্রয়োজন সম্মিপিত উদ্যোগ। আমাদেরকে তৈরি করতে হবে দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় আন্দোলন। আর সচেতনভাবে সেখানে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধে সক্ষম হতে পারব।
